"কথায় আছে "
গুরু করো জেনে আর প্রসাদ খাও টেনে"
📘 সূচিপত্র (প্রস্তাবিত)
- 1. প্রস্তাবনা — গুরুপূজার মাহাত্ম্য ও তপন ঘোষ স্মরণ
- 2. গুরু কে? – আধ্যাত্মিক ও সামাজিক ব্যাখ্যা
- 3. বাঙালির ভ্রান্ত গুরুবাদ: কেন পথ হারাচ্ছে জাতি
- 4. তপন ঘোষ: এক সাহসী ধর্মযোদ্ধার আত্মজীবনী (সংক্ষিপ্ত জীবনকথা)
- 5. যে গুরু পথ দেখান – সত্যের অভিযাত্রীদের কথা
- 6. যে গুরু ধ্বংস করেন – ছদ্ম গুরুবাদের বিপদ
- 7. গুরুর মুখে প্রসাদ না বিষ? – বেছে নেওয়ার সংকট
- 8. বাঙালির আত্মবিস্মৃতি ও শিকড়চ্যুতি
- 9. অর্থলোভ, নারীলোভ ও ক্ষমতার লোভ: গুরুবাদের বিপথগামিতা
- 10. একলব্য থেকে একবিংশ শতাব্দী: বিশ্বাসহীনতার ইতিহাস
- 11. গুরু মুখী বনাম মন মুখী – কাদের অনুসরণ করবো?
- 12. শিক্ষার বিকৃতি ও গুন্ডা সংস্কৃতির উত্থান
- 13. তপন ঘোষের বাণী: সত্যের ধারক ও বাহক
- 14. গুরুবাদ ও জাতির ভবিষ্যৎ
- 15. উপসংহার: গুরু-শিষ্য ঐক্য ও জাতীয় পুনর্জাগরণ
✍ অভিজিৎ বাইন
অধ্যায় ১
প্রস্তাবনা – গুরুপূজার মাহাত্ম্য ও তপন ঘোষ স্মরণ
১২ই জুলাই, এই দিনটি শুধুমাত্র একটি মৃত্যুবার্ষিকী নয়, এটি এক আত্মত্যাগের অনন্ত প্রকাশ। এদিনেই তপন ঘোষ, এক ধর্মযোদ্ধা, একজন প্রকৃত গুরু, এই জগৎ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। তাঁর স্মরণেই এই গ্রন্থ “কোথায় আছে গুরু করো জেনে আর প্রসাদ খাও টেনে”।
আজ আমরা এমন এক যুগে বসবাস করছি, যেখানে সত্য ও অসত্য একে অপরের মুখো-মুখি দাঁড়িয়ে আছে। যেখানে গুরুবাদের নামে চাতুরি, লোভ ও ধোঁকার রাজত্ব বিস্তার করছে। অথচ গুরু—এই শব্দটিই যথেষ্ট পবিত্র, যথেষ্ট আলোকিত। গুরু মানেই ‘অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণ’। কিন্তু সেই গুরু যদি মিথ্যার বাহক হন, তবে সমাজ যে অন্ধকারে তলিয়ে যাবে, তাতে আর সন্দেহ কী?
তপন ঘোষ ছিলেন এমন একজন মানুষ যিনি জাতিকে ধর্মের সঠিক পথ দেখাতে প্রাণপাত করেছিলেন। তিনি বলতেন, “ধর্ম রক্ষার জন্য যে পথিক, সে কখনো পিছিয়ে যায় না।” তাঁর জীবন ছিল বাঙালির আত্মচেতনার এক নির্মম প্রতিবিম্ব।
সমাজ আজ গুরু-দর্পণের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখ দেখতে ভুলে গেছে। কে গুরু, কে ছদ্মবেশী—তা বোঝার ক্ষমতা হারিয়েছে। এই গ্রন্থে আমরা সেই আধ্যাত্মিক ও সামাজিক গুরুত্ব খোঁজার চেষ্টা করবো যা তপন ঘোষ আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন।
---
অধ্যায় ২: গুরু কে? – আধ্যাত্মিক ও সামাজিক ব্যাখ্যা
“গুরু” শব্দটির আক্ষরিক অর্থ—অন্ধকার (গু) থেকে আলো (রু) এর দিকে যিনি নিয়ে যান। আধ্যাত্মিক অর্থে, গুরু হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি আত্মার মুক্তির পথ দেখান, জীবনের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে দিক নির্দেশ করেন।
গুরুর কাজ হলো শুধু শিক্ষাদান নয়, মানবচেতনাকে জাগ্রত করা, সমাজকে আত্মিকভাবে জোরদার করা। তিনি যেন একজোড়া চোখ, যাঁর দৃষ্টিতেই ভবিষ্যতের আলোর দিশা পাওয়া যায়। আধ্যাত্মিক গুরু যেমন ঈশ্বরচিন্তা ও পরমার্থিক জ্ঞান দান করেন, তেমনই সামাজিক গুরু সমাজ গঠনে নেতৃত্ব দেন।
আধুনিক যুগে গুরুর এই সংজ্ঞা বিকৃত হয়েছে। কেউ অর্থলোভে, কেউ রাজনৈতিক বা সামাজিক প্রভাব বিস্তারের আশায় গুরু হতে চায়। কিন্তু প্রকৃত গুরু নিঃস্বার্থ, আত্মসমর্পিত ও ত্যাগী। তাঁরা নিজেদের না ভেবে শিষ্যের কল্যাণেই আত্মনিবেদন করেন।
তপন ঘোষ ছিলেন এমন এক গুরু, যিনি আধ্যাত্মিকতা এবং সমাজচিন্তার মধ্যে সেতুবন্ধন ঘটিয়েছিলেন। তিনি কখনো আড়াল করেননি নিজেকে, বরং সমাজের ঘুণে ধরা কোণাগুলোতে প্রবেশ করে সেগুলো শোধন করার চেষ্টা করেছেন।
---
অধ্যায় ৩: বাঙালির ভ্রান্ত গুরুবাদ: কেন পথ হারাচ্ছে জাতি
বাঙালি জাতি শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অগ্রণী হলেও আত্মিক উন্নয়নের পথে বহু ক্ষেত্রেই বিভ্রান্ত হয়েছে। একসময় যে জাতি বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দের কথা হৃদয়ে ধারণ করত, আজ সেই জাতি ভুয়ো গুরুর প্রভাবে নিজেদের পথ হারিয়েছে।
বাজারের মতন গুরুবাদ এখন পণ্যে পরিণত হয়েছে। কিছু মানুষ "দর্শন" বিক্রি করছে, কেউ "মুক্তি" নামক শব্দটিকে বানিয়ে ফেলছে এক প্রকার শোষণের অস্ত্র। শিষ্যরা গুরু মানছে শুধু ফল পাওয়ার আশায়, গুরু নিজেও শিষ্যদের উপর আধিপত্য বজায় রাখতে তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছেন।
ফলাফল? – আত্মিক দীনতা, সামাজিক ভাঙন এবং ধর্মের নামে পাপাচার।
---
অধ্যায় ৪: তপন ঘোষ: এক সাহসী ধর্মযোদ্ধার আত্মজীবনী
তপন ঘোষ ছিলেন আধুনিক যুগের এক যোদ্ধা। তাঁর অস্ত্র ছিল সত্যবচন, লক্ষ্য ছিল জাতীয় পুনর্জাগরণ। তিনি ছিলেন বজ্রকঠিন চেতনার ধারক, অথচ হৃদয়ে ছিল অসীম করুণা। তিনি কখনো নিজেকে ঈশ্বরোত্তম দাবি করেননি, বরং সাধারণ মানুষের মতো থেকে অসাধারণ কাজ করেছেন।
তাঁর জন্ম এক সাধারণ পরিবারে, কিন্তু চেতনা ছিল অসাধারণ। তিনি হিন্দু ধর্মের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রাখতেন এবং বিশ্বাস করতেন ধর্ম মানেই মানবতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মবিকাশ। তাঁর বক্তৃতা ও লেখায় সমাজের কুঠারাঘাত ছিল স্পষ্ট। তিনি বলতেন, “ধর্ম রক্ষার জন্য যুদ্ধে নামা মানে ঘৃণা নয়, বরং তা এক প্রকার ভালবাসার প্রকাশ।”
---
অধ্যায় ৫: যে গুরু পথ দেখান – সত্যের অভিযাত্রীদের কথা
ইতিহাসে এমন বহু গুরু আছেন যাঁরা মানবজাতিকে নতুন পথ দেখিয়েছেন। যেমন, শ্রীচৈতন্য, শংকরাচার্য, স্বামী বিবেকানন্দ। তাঁরা কখনো নিজেকে কেন্দ্র করে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেননি, বরং মানবতার মধ্যে ঈশ্বরের উপস্থিতি খুঁজে বের করেছিলেন।
এমন গুরুদের কাছ থেকে মানুষ পেয়েছে সাহস, শান্তি, দয়া, করুণা এবং আত্মশক্তির সন্ধান।
তাঁদের জীবন ছিল ত্যাগময়, অহংকারশূন্য, অথচ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এঁরা শিষ্য তৈরি করেন, ভক্ত নয়।
---
অধ্যায় ৬: যে গুরু ধ্বংস করেন – ছদ্ম গুরুবাদের বিপদ
সমাজে একপ্রকার ছদ্মবেশী গুরুদের উত্থান হয়েছে যারা আসলে একপ্রকার ভণ্ড। তাঁরা গুরুবাদের মোড়কে মানুষের বিশ্বাস, অর্থ ও জীবন নিয়ে খেলা করেন। কিছু গুরু তো আর্থিক প্রতারণা, নারী নির্যাতন, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের সাথে সরাসরি যুক্ত।
এই গুরুদের আসল উদ্দেশ্য থাকে সমাজে আধিপত্য বজায় রাখা এবং ক্ষমতা ও বিত্তের লালসা পূরণ করা। শিষ্যদের সেবার নামে তাঁদের নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধি ঘটে।
তাঁদের চিনে রাখা জরুরি, কারণ এক ভুল গুরু একজন ব্যক্তির শুধু আত্মিক নয়, পারিবারিক, আর্থিক এবং সামাজিক সর্বনাশ করে দিতে পারে।
---
অধ্যায় ৭: গুরুর মুখে প্রসাদ না বিষ? – বেছে নেওয়ার সংকট
একটি দোকানে যেমন নানা পণ্যের ভিড়, তেমনই এই সমাজে আছে নানা রকম গুরু। তবে কোনটি প্রসাদ আর কোনটি বিষ – তা বেছে নেওয়া এখনকার মানুষের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
গুরু নির্বাচন মানে শুধু একজন শিক্ষকের নির্বাচন নয়, নিজের ভবিষ্যতের পথ নির্ধারণ। ভুল গুরু মানে অন্ধকারময় ভবিষ্যৎ।
গুরু নির্বাচনে চাই যুক্তিবোধ, অন্তর্দৃষ্টি ও পূর্ব প্রস্তুতি। শুধুমাত্র বাহ্যিক চাকচিক্য, অলৌকিকতার ভন্ড প্রচার বা ভয় দেখানো – এগুলো গুরুর গুণ নয়। গুরু হন তিনি যিনি নিজের কর্মে সত্য প্রতিষ্ঠা করেন।
---
অধ্যায় ৮: বাঙালির আত্মবিস্মৃতি ও শিকড়চ্যুতি
আজ বাঙালি নিজের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ধর্ম ও আত্মবিশ্বাস ভুলে গিয়েছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লেও নিজের শিকড়ে সে আর গর্ব বোধ করে না। নিজের ভাষা, গন্ধ, উৎসব, চিন্তা – সবকিছুই আজ যেন লজ্জার কারণ হয়ে উঠেছে।
এই আত্মবিস্মৃতি গুরু-শূন্যতার অন্যতম ফল। সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে বাঙালি আজ অর্থ আর বিলাসিতাকে ঈশ্বর বানিয়েছে। ফলে আত্মা শূন্য, চরিত্র দুর্বল, এবং সমাজ টালমাটাল।
অধ্যায় ৯: অর্থলোভ, নারীলোভ ও ক্ষমতার লোভ: গুরুবাদের বিপথগামিতা
আধুনিক সমাজে গুরু শব্দটি যেন ক্ষমতা, অর্থ এবং ভক্তের সংখ্যা বৃদ্ধির কৌশলমাত্র হয়ে উঠেছে।
অনেক গুরু আছেন যারা গুরু হবার আগে ছিলেন ব্যর্থ ব্যবসায়ী, অপরাধী বা ধনী কারবারিদের পৃষ্ঠপোষিত সমাজচিন্তক। তারা 'ভগবান'-এর আসনে বসে শিষ্যদের থেকে টাকা, নারী এবং জনপ্রিয়তা কুড়িয়ে নিচ্ছে।
সাধনায় নয়, তারা বিশ্বাস তৈরি করে শো'তে, বিজ্ঞাপনে, এবং জনপ্রিয়তার বাজারে। এই গুরুরা প্রকৃতপক্ষে জাতির আত্মার শত্রু। তারা মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলছে, সমাজের সারবত্তা ধ্বংস করছে।
---
অধ্যায় ১০: একলব্য থেকে একবিংশ শতাব্দী: বিশ্বাসহীনতার ইতিহাস
একলব্য যখন নিজের গুরুর জন্য আঙুল কাটে, তখন থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল—গুরু কি সত্যিই ন্যায়পরায়ণ? তাঁর কি উচিত ছিল এক নিরীহ প্রতিভাবান শিষ্যকে এমন আত্মবিসর্জনে বাধ্য করা?
এই ঘটনা আমাদের শিখিয়েছে গুরু নির্বাচন যেন কখনোই নিছক ভক্তি বা আবেগ দিয়ে না হয়।
একবিংশ শতাব্দীতে এসেও সেই গুরুর নাম ব্যবহার করে অনেকে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করছে। তারা এমনভাবে সমাজে অবস্থান করছে যেন তারা সত্যিই পরিত্রাতা, অথচ ভিতরে ভিতরে ধ্বংসের বীজ ছড়িয়ে দিচ্ছে।
---
অধ্যায় ১১: গুরু মুখী বনাম মন মুখী – কাদের অনুসরণ করবো?
“মন মুখী” সেই ব্যক্তি, যে নিজের আবেগ, কামনা ও কল্পনাকে গুরু বানিয়ে ফেলে। সে যা মনে চায়, তাই করতে চায়, তাই শুনতে চায়।
“গুরু মুখী” ব্যক্তি নিজের চিন্তা, ভাবনা, অহংকার ত্যাগ করে গুরুর উপদেশ মেনে চলে। সে আত্মসমর্পণ করতে জানে, এবং সেই কারণেই সে গঠনমূলক উন্নয়নের পথে এগোয়।
মন মুখীরা গুরুর কথা নিজেদের সুবিধামতো ব্যাখ্যা করে, গুরু মুখীরা তার অন্তর্জ্ঞান ও বোধ থেকে গ্রহণ করে। জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে কতজন মানুষ গুরু মুখী হতে পারছে তার উপর।
---
অধ্যায় ১২: শিক্ষার বিকৃতি ও গুন্ডা সংস্কৃতির উত্থান
আজ শিক্ষক মানে চাকরি, আর গুরু মানে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। শিক্ষার মূল লক্ষ্য ছিল মনুষ্যত্ব তৈরি, চরিত্র গঠন।
কিন্তু এখনকার দিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক ঠেক, আর গুরুবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যবসা।
অশিক্ষা ও মিথ্যা গুরুবাদের এই যুগে গুন্ডাদের হাতে সমাজের নেতৃত্ব চলে গেছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষকের হাতে বেত নেই, কিন্তু পাড়ায় গুন্ডার হাতে লাঠি আছে।
সমাজ শিক্ষার গুরুত্ব ভুলে শক্তির ভয়কে মান্যতা দিয়েছে। এই কারণেই আজ এই বাংলার মাটিতে প্রতিনিয়ত ঘটে নারী নির্যাতন, খুন, প্রতারণা ও ধর্ম নিয়ে ব্যঙ্গ।
---
অধ্যায় ১৩: তপন ঘোষের বাণী: সত্যের ধারক ও বাহক
তপন ঘোষ বলতেন, “তোমার ধর্ম মানে অন্যের প্রতি দায়িত্ব, তা একলা পালন করা যায় না।”
তাঁর বাণীতে ছিল অহিংসা নয়, প্রতিরোধ। প্রেম নয়, ন্যায়ের জন্য প্রতিজ্ঞা। তিনি শিখিয়েছেন, ধর্ম মানে আত্মবিকাশ, জাতিগত ঐক্য, এবং সত্যের পক্ষে আপোষহীন সংগ্রাম।
তিনি শিষ্যদের শিখিয়েছেন শুধু প্রণাম নয়, প্রতিজ্ঞাও করতে—“আমি অন্যায় সহ্য করবো না, আমি সমাজের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবো।”
তাঁর মৃত্যুর পর যাঁরা তাঁর নাম ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, তাঁরা প্রকৃতপক্ষে তাঁর শত্রু। তপন ঘোষের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হলে তাঁর পথ অনুসরণ করতে হবে, কণ্ঠস্বর নয়।
---
অধ্যায় ১৪: গুরুবাদ ও জাতির ভবিষ্যৎ
গুরু মানে কেবল ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব নয়, তিনি জাতির পথপ্রদর্শক।
যদি সমাজ প্রকৃত গুরুর পথ অনুসরণ করে, তাহলে চরিত্র, ন্যায়বোধ, আত্মবিশ্বাস, এবং জাতীয়তাবোধ গড়ে উঠবে। কিন্তু যদি ভণ্ড গুরুর পিছনে ছুটে, তাহলে দেশ ধ্বংস হবে, জাতি নষ্ট হবে, ভবিষ্যৎ অন্ধকারময় হবে।
আজকের তরুণদের হাতে যদি গুরুর জ্ঞান না পৌঁছে, তারা পথভ্রষ্ট হবে, মিডিয়ার ও ফ্যাশনের মোহে পড়ে নিজেদের আত্মা হারাবে।
তাই গুরুবাদের সংস্কার আবশ্যক—সততা, জ্ঞান ও ত্যাগে গড়া গুরুবাদ জাতির আশা।
---
অধ্যায় ১৫: উপসংহার: গুরু-শিষ্য ঐক্য ও জাতীয় পুনর্জাগরণ
আজ প্রয়োজন জাতীয় এক আত্মবিশ্লেষণ। আমাদের গুরু কে হবে, তা একান্ত আমাদের চয়নের উপর নির্ভর করে। ভুল করলে পতন, সঠিক হলে মুক্তি।
একটি জাতিকে তৈরি করতে লাগে সত্যিকারের শিক্ষক, চিন্তক ও নায়ক। তপন ঘোষ এমন একজন ছিলেন যিনি চেষ্টা করে গিয়েছিলেন সমাজকে জাগাতে, কিন্তু সমাজ তাঁকে বুঝে উঠতে পারেনি।
আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করাই হবে প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি। জাতির মুখে প্রসাদ উঠুক—ভক্তির, সত্যের, আত্মিক মুক্তির। মিথ্যার, ধোঁকার ও স্বার্থপরতার বিষ থেকে বেরিয়ে আমরা যেন গুরুর মুখে গ্রহণ করি সেই চিরন্তন শিক্ষা:
“নিজেকে জয় করো, অন্যকে নয়।”
সেই জয়ের জন্য চাই এক সত্যিকারের গুরু এবং এক আত্মনিবেদিত শিষ্য। এই গুরু-শিষ্য ঐক্যই পারে এই দেশকে নতুন আলোর পথে নিয়ে যেতে।
— শেষ
0 Comments