শাস্ত্রজ্ঞান হোক হাতিয়ার

Nataraj Ngo

nataraj


শাস্ত্রজ্ঞান হোক হাতিয়ার

নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু সনাতনী প্রশ্ন উত্তরের বর্ণনা,

 

অভিজিৎ বাইন

 

১. গীতা কি?

 

ভগবদ্ গীতা হল হিন্দু ধর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ। এটি মহাভারতের অন্তর্গত একটি অংশ, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে ধর্ম, কর্ম ও আত্মজ্ঞান সম্বন্ধে উপদেশ দেন।

---

 

২. গীতা কে রচনা করেন?

মহর্ষি বেদব্যাস মহাভারতের মতোই গীতারও রচয়িতা।

---

৩. গীতার সম্পূর্ণ নাম কি?

শ্রীমদ্‌ভগবদ্‌গীতা এটি গীতার পূর্ণ নাম।

---

৪. গীতার মোট কতগুলো শ্লোক আছে?

গীতায় ৭০০টি শ্লোক রয়েছে।

---

 

৫. গীতায় মোট কতগুলি অধ্যায় আছে?

মোট ১৮টি অধ্যায় রয়েছে।

 

---

৬. সনাতনের মূল ধর্মগ্রন্থ কয় প্রকার ও কি কি?

সনাতন ধর্মে প্রধান চারটি ধর্মগ্রন্থ রয়েছে:

🕉️ সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থসমূহ

সনাতন ধর্ম অর্থাৎ হিন্দু ধর্ম বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্মগুলোর মধ্যে একটি। এই ধর্মের মূল ভিত্তি হল বেদ, যা ঈশ্বরপ্রদত্ত জ্ঞান হিসেবে শ্রুত ও স্বীকৃত। চারটি প্রধান বেদ ছাড়াও আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্র রয়েছে যা এই ধর্মের ব্যাখ্যা ও অনুশীলনের স্তম্ভ।


📚 প্রধান চারটি বেদ:

১। ঋগ্বেদ (Rigveda)

·         প্রাচীনতম বেদ

·         এতে রয়েছে ১,০২৮টি সূক্ত (স্তব/স্তোত্র)।

·         মূলত দেবতাদের স্তব, প্রশংসা ও প্রার্থনা রয়েছে।

·         আগ্নি, ইন্দ্র, বরুণ, সোম ইত্যাদি দেবতার উদ্দেশ্যে স্তোত্র এখানে পাওয়া যায়।

২। সামবেদ (Samaveda)

·         এটি একটি সঙ্গীতনির্ভর বেদ

·         ঋগ্বেদের কিছু স্তোত্র সুরে গাওয়ার জন্যই সামবেদ রচিত।

·         এটি মূলত যজ্ঞে গাওয়া হয়

·         প্রাচীন ভারতীয় সংগীতের মূল উৎস বলা হয় সামবেদকে।

 

৩। যজুর্বেদ (Yajurveda)

·         এটি যজ্ঞ ও আচারবিধি বিষয়ক

·         দুইটি ভাগ রয়েছে শুক্ল যজুর্বেদ ও কৃষ্ণ যজুর্বেদ

·         যজ্ঞের মন্ত্র, বিধি ও প্রক্রিয়া এখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

৪। অথর্ববেদ (Atharvaveda)

·         এটি গৃহস্থ জীবন, চিকিৎসা, তন্ত্র ও মন্ত্র সংক্রান্ত।

·         দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা, রোগবালাই, দোষনাশ, অভিশাপ নিরাময় ইত্যাদি বিষয়ে বহু মন্ত্র এতে আছে।

·         আচার-আচরণ, নিরাপত্তা ও সামাজিক কল্যাণকামী বেদ।


📘 অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্র:

🔹 উপনিষদ:

·         প্রায় ১০৮টি উপনিষদ আছে, এর মধ্যে ঈশ, কেন, ছান্দোগ্য, ृहদারণ্যক, ক্ঠ উপনিষদ উল্লেখযোগ্য।

·         মূলত আত্মা, ব্রহ্ম, মুক্তি ও আত্মজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা।

·         দর্শনের দার্শনিক ভিত্তি এখানেই নিহিত।


🔹 পুরাণ:

·         ১৮টি মহাপুরাণ এবং উপপুরাণ রয়েছে।

·         শিব, বিষ্ণু, দেবী, ব্রহ্মা প্রভৃতি দেবতার কাহিনী, সৃষ্টি-তত্ত্ব, রূপকথা, ইতিহাস ও নৈতিক শিক্ষা এতে আছে।

·         যেমন: শ্রীমদ্ভাগবত, বিষ্ণু পুরাণ, শিব পুরাণ, দেবীভাগবত, আগ্নি পুরাণ ইত্যাদি।

🔹 স্মৃতি:

·         মনুস্মৃতি, নারদ স্মৃতি, যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি প্রভৃতি আইন ও ধর্মাচরণ বিষয়ক নির্দেশনা দেয়।

·         সমাজ, বিবাহ, উত্তরাধিকার, শৌচাচার ইত্যাদি নিয়ম এসব স্মৃতিতে বিস্তারিত আছে।

🔹 মহাকাব্য:

·         দুটি বিশাল মহাকাব্য
🔸 রামায়ণ (ঋষি বাল্মীকি রচিত) শ্রী রামচন্দ্রের জীবন ও ধর্মপথের কাহিনি
🔸 মহাভারত (বেদব্যাস রচিত) কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ, কৃষ্ণোপদেশ ও গীতার জ্ঞান এই কাব্যে বর্ণিত


🪔 উপসংহার:

সনাতন ধর্মের এই সমস্ত ধর্মগ্রন্থ শুধু ধর্মীয় আচারই নয়, বরং নেতৃত্ব, জ্ঞান, দর্শন, চিকিৎসা, সংগীত, সমাজতত্ত্ব, এবং নৈতিকতার পথ নির্দেশ করে।
এই শাস্ত্রসমূহ আজও বিশ্বের সর্বত্র মানুষের আত্মউন্নয়ন ও জ্ঞানের পাথেয় হয়ে আছে।

---

 

 

 

 

৭.  তেত্রিশ প্রকার দেবদেবী মানে কী?

 

হিন্দু শাস্ত্রে অনেক সময় বলা হয়, “তেত্রিশ কোটি দেবতাএটি আদতে সংখ্যার প্রতীকী রূপ, যার অর্থ৩৩ প্রকার প্রধান দেবত্ব। এই কোটিশব্দটি সংস্কৃত "কোটি" (कोटि) থেকে এসেছে, যার অর্থ কেবল কোটি (১০ মিলিয়ন)নয়, বরং শ্রেণি বা প্রকার’-ও বোঝায়। সুতরাং, “তেত্রিশ কোটিমানে ৩৩টি দেবত্বের শ্রেণি, না যে প্রকৃত ৩৩ কোটি আলাদা দেবতা।

🔹 এই ৩৩ দেবদেবী কারা?

    ১) ৮ বাসু (Aṣṭa Vasu) – প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তির প্রতীক:


🟩 কি বোঝায় 'বসু'?

বসুশব্দটি সংস্কৃত "वासु" (Vāsu) থেকে এসেছে, যার অর্থ:
👉 "
যিনি বসবাস করেন", বা
👉 "
যিনি ধন-সম্পদ, শক্তি ও জীবনের উৎস"।

এই দেবতারা প্রকৃতির আটটি মৌলিক শক্তির প্রতীক। এরা বিষ্ণু বা ইন্দ্র-এর সহচর হিসেবে পরিচিত এবং মূলত প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি হিসেবে কাজ করেন।


🟦 উৎপত্তির কাহিনি:

🔹 মহাভারত এবং বিষ্ণু পুরাণ অনুসারে, আট বসু হলেন আদি ব্রহ্মাণ্ডের সূচনাকালে জন্ম নেওয়া আটটি শক্তি, যাঁরা দেবতাদের এক শ্রেণি হিসেবে পরিচিত।
🔹
এঁরা ছিলেন দ্যৌ (আকাশ) ও পৃথিবী (পৃথিবী)-র পুত্রগণ।
🔹
আবার অন্য মতে, তাঁরা কাশ্যপ মুনি প্রভা নামক স্ত্রীর সন্তান।

 


 

 

🟨 আট বসুর নাম ও তাদের প্রতীকার্থ:

বসুর নাম

প্রতীক

ব্যাখ্যা

ধারা

জল (নদী-সাগর)

পৃথিবীর জলের উপাদান

অনিল

বায়ু (হাওয়া)

প্রাণবায়ু; জীবনের প্রবাহ

অগ্নি

আগুন

শক্তি, তেজ, ত্যাগ

প্রত্যুষ

ভোর

দিনের শুরু; নবজীবনের প্রতীক

ধ্রুব

ধ্রুবতারা

নিত্যতা ও স্থায়িত্ব

সোম

চন্দ্র

ঔষধ, ঠান্ডা, সৌন্দর্য

প্রভাষ

আলো, রশ্মি

জ্ঞানের আলো, সূর্যালোক

প্রভা / প্রত্যুঃ

আভা

দ্যুতি, দীপ্তি, অলৌকিক জ্যোতি

🔹বিষ্ণু পুরাণ অনুসারে কিছু নাম আলাদা হলেও প্রধান ধর্মগ্রন্থে এইরকম ৮ জনের উল্লেখই পাওয়া যায়।


🟧 বসুরা কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে?

  • এঁদের কাজ ছিল প্রকৃতি রক্ষা, জীবন শক্তি বজায় রাখা ধর্ম প্রতিষ্ঠা করা
  • ইন্দ্র বিষ্ণু-এর অনুগামী হিসেবে এঁরা স্বর্গলোকে দায়িত্ব পালন করতেন।
  • এঁরা পঞ্চতত্ত্ব (পৃথিবী, জল, আগুন, বায়ু, আকাশ) ও চন্দ্র, সূর্য, আলোএই সব শক্তির আধার।

🟥 ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কাহিনী ভীষ্ম ও আট বসু:

গঙ্গা ও আট বসুর পুনর্জন্ম

একবার আট বসু একজন ঋষির গাভী চুরি করেন, যা ছিল নিষিদ্ধ।
রুষ্ট হয়ে সেই ঋষি তাঁদের মানবজন্মে অভিশাপ দেন।

🔸 তাঁরা মা গঙ্গার কাছে প্রার্থনা করেন যেন পৃথিবীতে তাঁদের দ্রুত মুক্তি হয়।
🔸
গঙ্গা তাঁদের সন্তান রূপে জন্ম দিয়ে একে একে সাতজনকে জন্মের পরপরই জলে ফেলে মুক্তি দেন
🔸
কিন্তু অষ্টম বসু (প্রভাষ) ছিল সেই চুরির মূল পরিকল্পনাকারী তাই তাঁকে দীর্ঘ জীবন ভোগ করতে হয়।
🔸
এই অষ্টম বসুই পরে ভীষ্ম নামে পরিচিত হন।

👉 তাই বলা যায়, ভীষ্ম ছিলেন এক বসুর (প্রভাষ) মানবরূপে অবতার


🟨 ধর্মীয় ও দার্শনিক গুরুত্ব:

১. প্রাকৃতিক শক্তিকে ঈশ্বর রূপে মান্যতা দেওয়া হয় এই বসুদের মাধ্যমে।
২. এই আট বসু আমাদের জীবনের ভিত্তি উপাদানযেমন জল, আলো, বাতাস এর প্রতীক।
৩. এই দেবতারা আমাদের মনে করিয়ে দেন প্রকৃতি ও বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের শক্তির প্রতি সম্মান রাখার কথা।


🔚 উপসংহার:

আট বসু হলেন প্রকৃতির নানা শক্তির দেবতা, যাঁরা হিন্দু ধর্মে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এঁদের অস্তিত্ব কেবল পৌরাণিক নয়, বরং দার্শনিকভাবে জীবনের মৌলিক শক্তির প্রতীক

তাঁদের কাহিনির মধ্য দিয়ে আমরা বুঝতে পারি ঈশ্বর প্রকৃতির মধ্যেই বাস করেন, আর প্রকৃতি ভগবানের প্রকাশ।

 

 

 

    ২) ১১ রুদ্র (একাদশ রুদ্র) শিবের বিভিন্ন রূপ ও তপস্যার দেবতা:

 

 

রুদ্ররা হলেন তপস্যার, ধ্বংস ও পুনর্গঠনের দেবতা। রুদ্ররা হলেন:

 

🔷 রুদ্র কারা?

রুদ্রশব্দটি এসেছে সংস্কৃত "রুদ্" ধাতু থেকে, যার অর্থকান্নাবা চিৎকার করা
অর্থাৎ, রুদ্র হলেন এমন শক্তির প্রতীক, যিনি ধ্বংস, ক্রোধ, তপস্যা ও পরিবর্তনের দেবতা
রুদ্রগণ হলেন ভগবান শিবের বিভিন্ন রূপএই ১১ রুদ্রকে শিবের প্রসারিত শক্তি বা উপরূপ হিসেবেও ধরা হয়।


🔶 ১১ রুদ্রের মূল পরিচয়:

পুরাণ অনুসারে, এই রুদ্ররা বিভিন্ন গ্রন্থে বিভিন্ন নামে পরিচিত, তবে প্রধানত তিনটি মত অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি গৃহীত নামাবলি ও ব্যাখ্যা নিচে দেওয়া হলো।


🟨 মূল ১১ রুদ্রের নাম ও অর্থ (বৃহদ্দেবতা পুরাণ অনুসারে):

রুদ্রের নাম

অর্থ ও প্রতীক

ব্যাখ্যা

১. হর (Hara)

বিনাশকারী

সর্বগ্রাসী শক্তি

২. ভব (Bhava)

অস্তিত্ব

জীবনের উপস্থিতি

৩. শম্ভু (Shambhu)

কল্যাণকারী

শান্তিদাতা, আশীর্বাদকারী

৪. অপরাজিতা (Aparajita)

অপরাজেয়

যে জয়ী, তাঁকে কেউ হারাতে পারে না

৫. ত্র্যম্বক (Tryambaka)

তিন-চক্ষু বিশিষ্ট

সর্বদর্শী; জ্ঞান, কাজ ও ইচ্ছার প্রতীক

৬. মহাদেব (Mahadeva)

মহান দেবতা

সর্বোচ্চ শক্তির অধিকারী

৭. ঈশান (Ishana)

ঈশ্বর

দিক্‌নিয়ন্তা, সর্বশক্তিমান

৮. পিনাকী (Pinaki)

ত্রিশূলধারী

শিবের অস্ত্র 'পিনাক' বহনকারী

৯. সার্ব (Sarva)

সর্বত্র বিরাজমান

সর্বশক্তির আধার

১০. কপালি (Kapali)

খাপহীন খুলি বহনকারী

ত্যাগ ও বৈরাগ্যের প্রতীক

১১. সদাশিব (Sadashiva)

চিরশান্ত ও শুদ্ধ রূপ

শুদ্ধ চেতনা ও শিবত্বের চূড়ান্ত রূপ


🟦 শাস্ত্রমত উৎস (কিছু বিকল্প নাম):

বিষ্ণু পুরাণ, ভাগবত পুরাণ এবং শিব পুরাণে এই নামগুলির কিছু রূপান্তর বা বিকল্প আছে। কখনও এই রুদ্ররা শিবের মানসপুত্র (মানসিক সৃষ্টি), কখনও তারা প্রজাপতির রূপে জন্মগ্রহণ করেন।

আরেক প্রাচীন মতে, রুদ্ররা হচ্ছেন:

  • অজ, একপাদ, অহির্বুদ্ধ্যন, ত্বষ্টা, রুদ্র, হর, শম্ভু, ত্র্যম্বক, আপ, কপর্দিন, রেবত

(এই রূপান্তরগুলি ভেদগ্রন্থ অনুযায়ী পাল্টায়।)


🔶 রুদ্রদের জন্মকাহিনি (পৌরাণিক উৎস):

  • ব্রহ্মা একদিন তপস্যায় বসেন। হঠাৎ তাঁর মনের মধ্যে থেকে প্রচণ্ড শক্তিতে এক রূপ জন্ম নেন, যিনি ক্রোধে কাঁদছিলেন। সেই কান্না থেকেই রুদ্ররূপ ধারণ করেন।
  • তিনি একা না থেকে আরও ১০টি রূপ ধারণ করেন এভাবেই একাদশ রুদ্রের সৃষ্টি হয়।
  • এই রুদ্ররা ব্রহ্মার আদেশে সৃষ্টির ধ্বংস ও পুনর্গঠনের দায়িত্বে নিয়োজিত হন।

🟧 ১১ রুদ্রদের ভূমিকাঃ

দিক

কাজ

সৃষ্টি

পুরাতন জড় শক্তিকে বিলীন করে নতুন সৃষ্টির পথ উন্মুক্ত করেন

ধ্বংস

পাপ, অন্যায়, অহংকার ও অশুদ্ধতা ধ্বংস করেন

তপস্যা

তপস্যা ও ধ্যানের মাধ্যমে জ্ঞানের বিস্তার ঘটান

শিবতত্ত্ব

১১টি রুদ্র = শিবের ১১টি শক্তির প্রকাশ


🟥 ১১ রুদ্রের পূজা কোথায় হয়?

  • নেপালে পশুপতিনাথ মন্দির,
  • ভারতে কাশী বিশ্বনাথ, কেদারনাথ, রুদ্রপ্রয়াগ,
  • এবং অনেক শৈব তীর্থে ১১ রুদ্রের আলাদা আলাদা পূজা হয়।

🔚 উপসংহার:

👉 ১১ রুদ্র শিবের বিভিন্ন শক্তির রূপ।
👉
তাঁরা প্রতীক শুদ্ধি, ধ্বংস, তপস্যা, আত্মজ্ঞান ও সর্বশক্তির।
👉
তাঁদের নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে সৃষ্টির রহস্য, ধ্বংসের প্রয়োজন এবং প্রকৃত পরিত্রাণের পথ।

 

(প্রসঙ্গভেদে রুদ্রদের নাম বিভিন্ন পুরাণে আলাদা হতে পারে।)

 

---

 

   ৩) ১২ আদিত্য (Dvādaśa Āditya) – সূর্যের বারো রূপ, বছরের মাস অনুসারে:

 

প্রতিটি আদিত্য একেকটি মাসকে প্রতিনিধিত্ব করে। তারা হলেন:

 

  ১২ আদিত্য

👉 তাঁদের জন্ম কাহিনি, নাম, এবং ধার্মিক ও জ্যোতিষীয় ব্যাখ্যা


🟩 আদিত্য কারা?

আদিত্যশব্দটি এসেছে অদিতিথেকে।
অদিতি ছিলেন দেবমাতা, কশ্যপ মুনির স্ত্রী।
👉
অর্থাৎ, আদিত্যরা হলেন কশ্যপ ও অদিতির ১২ পুত্র, এবং তাঁরা সূর্যের ১২টি রূপ বা দেবতা


🟨 কেন ১২ আদিত্য?

প্রকৃতপক্ষে, হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্র ও পুরাণ অনুসারে:

  • বছরে ১২ মাস, প্রতিটি মাসে সূর্য একবার এক-একটি রাশিতে প্রবেশ করে।
  • প্রতিটি রাশির এক-একজন আদিত্য অধিপতি হিসেবে কাজ করেন।
    👉
    অর্থাৎ, ১২ আদিত্য সূর্যের ১২ রূপ, যা সময়, ঋতু ও জীবনচক্রের প্রতীক।

🟦 ১২ আদিত্যর নাম ও ব্যাখ্যা (ভাগবত পুরাণ ও বিষ্ণু পুরাণ অনুসারে):

ক্র.

নাম

অর্থ ও প্রতীক

সময় / মাস

আর্যামা

অতিথি ও ধর্মরক্ষার দেবতা

বৈশাখ

ধাতা

সৃষ্টিকর্তা ও স্থিতির দেবতা

জ্যৈষ্ঠ

মিত্র

বন্ধুত্ব ও ঐক্যের প্রতীক

আষাঢ়

শক/শক্র

শক্তি, প্রতিদ্বন্দ্বীকে দমনকারী

শ্রাবণ

বিভাস্বান / বিবস্বান

জ্যোতির্ময় সূর্য

ভাদ্র

পুষা

পথপ্রদর্শক, যাত্রার দেবতা

আশ্বিন

বগ

ভোগ ও ভাগ্যের দেবতা

কার্তিক

অংশ

অংশদানকারী, ভাগ বিতরণকারী

অগ্রহায়ণ

ত্বষ্টা

দেব কারিগর, রূপ-রচয়িতা

পৌষ

১০

সব্য

রশ্মির প্রসারকারী

মাঘ

১১

ঈশা / ঈশান

সর্বশক্তিমান অধিপতি

ফাল্গুন

১২

বিশ্ণু

সর্বব্যাপী, পালনকর্তা

চৈত্র

👉 এই নামগুলি ভিন্ন পুরাণে ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হলেও মূল প্রতীকধর্মী অর্থ প্রায় এক।


🟫 জন্ম ও পৌরাণিক কাহিনি:

  • কশ্যপ ঋষি ও অদিতি দীর্ঘ তপস্যার পর দেবতাদের রক্ষার জন্য ১২টি দেবপুত্র লাভ করেন।
  • এই পুত্রদের বলা হয় আদিত্য, অর্থাৎ অদিতির সন্তান
  • এঁরা সবাই ছিলেন সূর্যের বিভিন্ন রূপ।
  • তারা অসুরদের বিরুদ্ধে দেবতাদের পক্ষ নিয়ে কাজ করতেন এবং বিশ্বশৃঙ্খলা বজায় রাখতেন।

🟧 আদিত্যদের গুরুত্ব:

🔹 ধর্মীয় দিক:

  • সূর্যের ১২টি আলাদা গুণকে বোঝায়।
  • একেক আদিত্য একেক সময় বা ঋতুর পৃষ্ঠপোষক।

🔹 জ্যোতিষ শাস্ত্রের দিক:

  • ১২টি রাশি (mesh থেকে meen)
  • প্রতিটি রাশির সঙ্গে এক-একজন আদিত্য জড়িত।
  • নবগ্রহের মধ্যে সূর্য হলেন প্রধান এবং এই ১২ আদিত্য সেই সূর্যের ১২ পারমার্থিক রূপ।

🟨 প্রতীকার্থ:

আদিত্য

প্রতিনিধিত্ব করেন

আর্যামা

সততা, অতিথিসেবা

ধাতা

স্থিরতা ও সৃষ্টি

মিত্র

বন্ধুত্ব, সৌহার্দ

শক্র

দুষ্ট দমন

বিবস্বান

আলো, শক্তি

পুষা

পথপ্রদর্শক

ভগ

ভাগ্য ও ভোগ

অংশ

দাতা

ত্বষ্টা

রূপ রচনা ও নির্মাণ

সব্য

আলো ছড়িয়ে দেওয়া

ঈশান

নেতৃত্ব

বিষ্ণু

শাশ্বততা ও সার্বভৌমত্ব


🔶 উপসংহার:

👉 ১২ আদিত্য হলেন সময়চক্র, ঋতু, রাশি ও জীবনের নিয়মতান্ত্রিক গতির প্রতীক।
👉
এঁরা সূর্যের ১২ গুণ বা প্রভাব যা মানবজীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কাজ করে।
👉
তাঁরা কেবল দেবতা নন, জীবনচক্রের শক্তি ও নৈতিকতার ধারক

 

এদের মূল কাজ হচ্ছে পৃথিবী ও প্রজাদের তেজ, আলো, ঋতু ও সময়চক্রে প্রভাব বিস্তার করা।

 

---

 

  ৪) ২ অশ্বিনী কুমার দেবতাদের চিকিৎসক:

 

তাঁরা হলেন যমজ দেবতা:

  দুই অশ্বিনী কুমার

👉 তাঁদের নাম, উৎপত্তি, ধর্মীয় ব্যাখ্যা ও কর্ম


🔶 কে এই দুই অশ্বিনী?

অশ্বিনী কুমার বলতে বোঝানো হয়দুটি যমজ দেবতা, যাঁরা দেবতাদের মধ্যে চিকিৎসাবিদ্যায় (আয়ুর্বেদে) সর্বোৎকৃষ্ট ও বিখ্যাত।

👉 এঁরা হলেন দেবতাদের চিকিৎসক (Dev Vaidya)


🟩 নাম ও পরিচয়:

নাম

অর্থ

পরিচয়

নাসত্য

সত্যের নাড়ি বোঝার ক্ষমতা

বড় ভাই, স্থিতির প্রতীক

দস্র / দশ্র

গতি ও কর্মের প্রতীক

ছোট ভাই, গতি ও সার্জারির প্রতীক

⚠️ কখনো কখনো উভয়ের নাম একত্রে "নাসত্য-দস্র" বলা হয়।


🟨 উৎপত্তিকাহিনি:

🔹 সংস্কৃত 'অশ্ব' মানে ঘোড়া।
🔹
এঁদের মুখ ঘোড়ার মতো বলে তাঁদের নাম হয়েছে "অশ্বিনী"

জন্ম:

  • দেবী সন্ধ্যা (সূর্যদেবের স্ত্রী) ঘোর তপস্যা করে মার্তণ্ড সূর্য থেকে দূরে সরে যান।
  • তখন তিনি একটি ঘোড়ী রূপে তপস্যা করছিলেন।
  • সূর্যও ঘোড়া রূপে গিয়ে মিলিত হন।
  • তাঁদের থেকে জন্ম নেয় যমজ সন্তাননাসত্য ও দস্র

🔸 এই জন্ম কাহিনি থেকে বোঝা যায়তাঁরা ঘোড়ার মতো দ্রুত, বলিষ্ঠ, ও নির্ভীক


🟦 পৌরাণিক ভূমিকা ও কীর্তি:

🔹 অশ্বিনী কুমাররা:

  1. দেবতাদের যেকোনও আঘাত, অঙ্গহানি বা রোগ সারিয়ে তুলতেন
  2. তাঁরা ঔষধ, শল্যচিকিৎসা ও পুনর্জীবন ক্ষমতায় বিশেষজ্ঞ ছিলেন
  3. অসংখ্য দেব-অসুর যুদ্ধের সময় তাঁরা আহত দেবতাদের সুস্থ করে তুলেছেন

🔹 বিখ্যাত কীর্তি – “চ্যবনপ্রাশও চ্যবন ঋষির পুনর্জবন:

  • চ্যবন ঋষি একবার বার্ধক্যগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন।
  • তখন অশ্বিনী কুমাররা তাঁর দেহে ওষুধ প্রয়োগ করে তাঁকে তরুণ করে তোলেন।
  • এই ঘটনা থেকেই চ্যবনপ্রাশওষুধের নাম এসেছে।

 

 

 

🟧 ধর্মীয় গুরুত্ব:

দিক

ব্যাখ্যা

ঋগ্বেদ

অশ্বিনী কুমারদের অনেক স্তুতি আছে; তাঁদের ডাকলে তাঁরা দ্রুত ছুটে আসেন

রামায়ণ

হনুমান জন্মের পূর্বে, অশ্বিনী কুমাররা ঔষধ প্রস্তুতির দায়িত্বে

মহাভারত

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে দেবতাদের পক্ষে বিভিন্ন চিকিৎসা


🟥 প্রতীকি ও আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা:

প্রতীক

অর্থ

ঘোড়ার মুখ

গতি, প্রাণশক্তি, সাহস

যমজ রূপ

জীবনের ভারসাম্য: স্থিরতা ও গতি, শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা

চিকিৎসাবিদ্যা

আত্মশুদ্ধি ও পুনরুত্থানের শক্তি


🟨 আধুনিক ব্যাখ্যা:

  • অশ্বিনী কুমাররা হলেন আয়ুর্বেদ, চিকিৎসা, ও বিজ্ঞানচর্চার দেবতা
  • আজকের দিনে চিকিৎসকদের প্রতীক হিসেবে তাঁদের মানা হয়।
  • তাঁদের সাধনা করলে রোগমুক্তি, দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যের আশীর্বাদ লাভ হয়।

🟦 জ্যোতিষশাস্ত্রে অশ্বিনী:

  • অশ্বিনী নক্ষত্র (মেষ রাশির প্রথম নক্ষত্র) এই নক্ষত্রের অধিপতি হলেন অশ্বিনী কুমাররা।
  • এই নক্ষত্রের জাতকরা দ্রুতগামী, বুদ্ধিমান, সাহসী এবং চিকিৎসা বা সাহায্যের কাজে পারদর্শী হন।

 

🔚 উপসংহার:

🔹 অশ্বিনী কুমার হলেন চিকিৎসার দেবতা যারা শুধুমাত্র রোগ সারাতেন না, বরং জীবন ও আত্মার পুনর্জাগরণ ঘটাতেন
🔹
তাঁরা হিন্দুধর্মে চিরন্তন সাহায্য, প্রাণশক্তি ও সুস্থতার প্রতীক
🔹
বিজ্ঞান, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার কর্মীরা আজও তাঁদের প্রতীকি অনুসরণ করেন।

এরা উষা (ভোরের দেবী)-র সন্তান এবং দেবতাদের চিকিৎসাবিদ্যায় পারদর্শী।

 

  মোট: ৮ (বাসু) + ১১ (রুদ্র) + ১২ (আদিত্য) + ২ (অশ্বিনী) = ৩৩ দেবতা

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

 

এই ৩৩ দেবতার ধারণাই কালক্রমে সাধারণ মানুষের ভাষায় "তেত্রিশ কোটি দেবতা" রূপে প্রচলিত হয়ে যায়।

তেত্রিশ প্রকার দেবদেবী মানে আক্ষরিক ৩৩ কোটি নয়, বরং ৩৩ শ্রেণির শক্তি বা দেবত্ব। তারা প্রকৃতি, সময়, তপস্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার প্রতীক, এবং সনাতন ধর্মে এই শক্তিগুলোকেই পূজা করার মাধ্যমে মানুষ প্রাকৃতিক ও আধ্যাত্মিক ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে।

                                             ___________________________________________

 

 

 

 

৮. ধৃতরাষ্ট্র কার কাছে যুদ্ধের সংবাদ নিচ্ছিল?

ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়-এর মাধ্যমে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের খবর জানতেন। সঞ্জয় ছিলেন তাঁর দূরদর্শী দূত।

 

---

৯. হস্তিনাপুরের মন্ত্রী কে ছিল?

বিদুর ছিলেন হস্তিনাপুরের জ্ঞানী ও ন্যায়বান মন্ত্রী।

 

---

১০. দ্রৌপদীর বাবা ও ভাই এর নাম কি?

দ্রৌপদীর বাবা ছিলেন রাজা দ্রুপদ এবং ভাইয়ের নাম ধৃষ্টদ্যুম্ন।

---

১১. মামা শকুনি কোন রাজ্যের রাজা ছিল?

শকুনি ছিলেন গান্ধার রাজ্যের রাজা ও কৌরবদের মামা।

 

---

 

১২. শ্রীকৃষ্ণ কোন রাজ্য স্থাপিত করেন, বর্তমানে কোথায়?

শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকা নগরী স্থাপন করেন। বর্তমান এটি গুজরাত রাজ্যে অবস্থিত।

---

 

১৩. ধৃতরাষ্ট্রের কতগুলি সন্তান ছিল?

ধৃতরাষ্ট্রের ছিল ১০০ পুত্র ও ১ কন্যা (দুঃশলা)। কৌরবদের মধ্যে প্রধান ছিলেন দুর্যোধন ও দুঃশাসন।

---

 

১৪. অর্জুনকে জেতানোর জন্য গুরু দ্রোণাচার্য কোন শিষ্যের আঙুল কেটে নিয়েছিলেন এবং সে কি বিদ্যা জানত?

একলব্য ছিলেন সেই শিষ্য। তিনি আত্মপ্রশিক্ষণে অদ্বিতীয় ধনুর্বিদ্যা অর্জন করেছিলেন। দ্রোণাচার্য অর্জুনকে শ্রেষ্ঠ রাখতে তাঁর ডান হাতের অঙ্গুষ্ঠ (আঙুল) চেয়ে নেন।

---

 

১৫. গীতা কোন যুগে লেখা হয়েছে?

গীতা দ্বাপর যুগে বলা হয়েছে এবং পরে কলি যুগের শুরুতে লেখা বা সংকলন হয়েছে বলে মনে করা হয়।

---

 

 

১৬. নকুল কি বিদ্যা জানত?

নকুল ছিলেন ঘোড়া চর্চায় ও আয়ুর্বেদে দক্ষ। তিনি চিকিৎসাবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন।

---

১৭. ভীমের পুত্রের নাম কি?

ভীমের পুত্র ছিলেন ঘটোৎকচ। তাঁর মা ছিলেন অসুর রমণী হিদিম্বা।

---

১৮. শ্রীকৃষ্ণের সন্তানের নাম কি?

শ্রীকৃষ্ণের একজন সুপরিচিত পুত্রের নাম ছিল প্রদ্যুম্ন। এছাড়াও তাঁর বহু সন্তান ছিল।

---

১৯. অর্জুনের মোট কজন স্ত্রী ছিল এবং তারা কে কে?

অর্জুনের মোট চার জন স্ত্রী ছিলেন:

১. দ্রৌপদী

২. সুভদ্রা (শ্রীকৃষ্ণের বোন)

৩. উলূপী (নাগকন্যা)

৪. চিত্রাঙ্গদা (মণিপুর রাজ্যের রাজকন্যা)

 

 

 

 

 

২০. কর্ণের রথ যখন কাদায় ফেঁসে যায় তখন সেই রথের সারথি কে ছিল?

কর্ণের সারথি ছিলেন শাল্য (মাদ্র দেশের রাজা), যিনি ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে ভুল পরামর্শ দিতেন।

---

২১. পশুপতি অস্ত্র কোন দেবতা প্রদান করেন এবং তা কার উপরে চালানো হয়?

শিব পশুপতি অস্ত্র প্রদান করেন অর্জুনকে। এই অস্ত্র পরে কখনও কারও উপর ব্যবহার হয়নি, এটি অর্জুনের শক্তির প্রতীক হিসেবে থাকত।

---

 

২২. ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির কোন রাজ্যের চক্রবর্তী রাজা ছিল?

যুধিষ্ঠির ইন্দ্রপ্রস্থ রাজ্যের রাজা ছিলেন এবং রাজসূয় যজ্ঞ করে চক্রবর্তী সম্রাট হন।

--

২৩. রাজা পরীক্ষিতের বাবার নাম কি?

পরীক্ষিতের বাবা ছিলেন অভিমন্যু এবং মা উত্তরা। অভিমন্যু অর্জুন ও সুভদ্রার পুত্র।

---

২৪. মহাভারত যুদ্ধে পান্ডবদের কত আক্সারেনি সেনা ছিল এবং তা বর্তমান সংখ্যায় কত হবে?

পাণ্ডবদের ছিল ৭ আক্সৌহিণী সেনা।

একটি আক্সৌহিণী সেনায় ছিল প্রায় ২,১৮,৭০০ জন সৈন্য।

সেই অনুযায়ী ৭ আক্সৌহিণীতে মোট সৈন্যসংখ্যা:

× ,১৮,৭০০ = ১৫,৩০,৯০০ জন সৈন্য (প্রায়)

---

আপনার আরো কিছু জানার থাকলে প্রশ্ন করতে পারেন/

                      natarajngo.com


0 Comments