গুরু মা কমলি সরেন: সংগ্রাম থেকে স্বীকৃতির পথচলা

Nataraj Ngo



 

বইয়ের নাম:

গুরু মা কমলি সরেন: সংগ্রাম থেকে স্বীকৃতির পথচলা

লেখক:

অভিজিৎ বাইন


সূচিপত্র (প্রস্তাবিত)

১. জন্ম ও শৈশব
২. বিবাহ ও দুর্দিনের সূচনা
৩. মাতৃত্ব ও জীবনসংগ্রাম
৪. স্বপ্নে ঈশ্বরদর্শন ও দীক্ষা
৫. তপন ঘোষের প্রভাব
৬. আশ্রমের সূচনা ও কাজ
৭. নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম
৮. সংগঠন ও সামাজিক দায়িত্ব
৯. পদ্মশ্রী পুরস্কার: এক স্বীকৃতির গল্প
১০. মন্দির ও ছাত্রাবাস গড়ার স্বপ্ন
১১. আগামী দিনের গুরু মা তৈরির ভাবনা
১২. সমাজের প্রতি আহ্বান
১৩. শেষ কথা: এক মহীয়সী নারীর জীবনপাঠ


 

প্রথম অধ্যায়: জন্ম ও শৈশব

১৯৭১ সালে মালদা জেলার গাজোল ব্লকের অন্তর্গত কোদালহাটি গ্রামের এক দরিদ্র সাঁওতাল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কমলি সরেন। ছোট থেকেই দারিদ্র্য ছিল তার নিত্যসঙ্গী। বাবার সংসারে প্রতিদিন চলত অভাব-অনটনের সংগ্রাম। বস্তির ঘরের কুয়াশা মাখা সকালে উঠেই তাকে তাকিয়ে থাকতে হতো — “আজ কী খাব, আদৌ খাব তো?”

শৈশব থেকেই দুঃখ-কষ্টে তার মন তৈরি হয়েছে সমাজের বাস্তবতা বোঝার জন্য। খেলাধুলার পরিবর্তে তার দিন কেটেছে বাড়ির কাজ, ক্ষেতের কাজ, কখনওবা গৃহস্থালির সঙ্গেই সহায়ক হয়ে। পড়াশোনার সুযোগ পাননি, তবে মানুষের ব্যথা বোঝার যে শিক্ষা তা ছোটবেলা থেকেই তার ভিতরে গেঁথে যায়।

এই দারিদ্র্যের ভিতরেই তৈরি হয় এক অসাধারণ মানসিকতা, যা পরে তাকে "গুরু মা" হিসেবে পরিচিত করিয়ে দেয়।

 

 

অধ্যায় ২: বিবাহ ও দুর্দিনের সূচনা

শৈশবের সীমাহীন কষ্ট ও প্রতিদিনের আর্থিক সংগ্রামের মাঝেই কমলি সরেন কৈশোরে পা রাখেন। তখন সমাজে প্রচলিত নিয়ম মেনেই একদিন তাঁর বিয়ে হয়। স্বপ্ন ছিলনতুন পরিবারে হয়তো একটু শান্তি, একটু স্বস্তি মিলবে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল আরও কঠিন।

স্বামীর সংসারে গিয়েও দারিদ্র্য যেন ছায়ার মতো পিছু ছাড়ল না। স্বামী ছিলেন একজন শ্রমজীবী মানুষ, যাঁর উপার্জন ছিল নিতান্ত অল্প। সংসার চালানো, নিজের খাদ্য জোগাড় করা, সন্তান আসার পরে তার দুধ ও ওষুধের ব্যবস্থা করাসবকিছুই যেন একটি পাহাড়সম দায়িত্ব হয়ে দাঁড়াল কমলির জীবনে।

এই কষ্টের মাঝেই কমলি সরেন মা হন। শিশুকন্যার মুখে প্রথম হাসি এনে দিয়েছিল এক অন্যরকম আনন্দ, কিন্তু সেই হাসির পিছনে লুকিয়ে ছিল এক নতুন দায়িত্ব। সন্তান বড় হচ্ছে, তার ক্ষুধা, তার কান্নামায়ের অন্তরে ঝড় তুলত।

এমনই এক কঠিন সময়ে জীবনের নিষ্ঠুরতম অধ্যায়ের সূচনা হয়তাঁর স্বামী এক মারাত্মক মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হন। চিকিৎসার খরচ, ওষুধ, পথ্য, সেবাসবকিছু করার পরেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। একদিন তাঁর স্বামী পরলোকগমন করেন। কমলি তখন সম্পূর্ণ একা, এক হাতে বাচ্চা আর এক হাতে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন জীবনের রূঢ় বাস্তবতার সামনে।

খাবারের সংস্থান, শিশুকন্যার দুধ জোগাড়, নিজের পেটের ক্ষুধাসবকিছু একা হাতে সামলাতে গিয়ে তাঁকে প্রতিদিন ছুটতে হতো কখনও পরিচিতদের বাড়ি, কখনওবা অচেনা মানুষের কাছে। অনেক দিন না খেয়ে থেকেছেন, শুধু যেন সন্তানের মুখে কিছু খাবার তুলে দিতে পারেন।

এই সময়েই তাঁর জীবনে এক অলৌকিক মোড় আসে।

একদিন গভীর রাতে, দীর্ঘ ক্লান্তির পরে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি। স্বপ্নে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখেনএক দেবতুল্য সত্তা যেন তাঁকে বলছে:
তোমার কষ্ট একদিন শেষ হবে। সমাজের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করো। তুমি হিংসা নয়, করুণা নিয়ে জন্মেছো।

এই স্বপ্নের প্রভাব ছিল গভীর। পরদিন থেকেই তিনি অনুভব করতে থাকেনএই জীবন শুধুই নিজের দুঃখ ভোগের জন্য নয়, সমাজের জন্য কিছু করার মধ্যেই হয়তো সত্যিকারের শান্তি লুকিয়ে আছে। এই উপলব্ধি তাঁর জীবনের দিগন্ত খুলে দেয়।

এর পরেই শুরু হয় তাঁর নতুন পথচলাএক গুরু ব্যক্তিত্বের আশীর্বাদ ও দীক্ষার মাধ্যমে। যিনি তাঁর হাতে তুলে দেন সমাজসেবার দীপ্ত আলো। পরবর্তী অধ্যায়ে আমরা জানব সেই গুরুজন, সেই দীক্ষা ও জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা সম্পর্কে।

 

 

অধ্যায় ৩: স্বপ্নে ঈশ্বরদর্শন ও দীক্ষা

দুঃখে জর্জরিত, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে বেদনা ও লাঞ্ছনার স্পর্শ নিয়ে পথ চলছিলেন কমলি সরেন। কিন্তু সেই একরাত্রির স্বপ্ন বদলে দেয় তাঁর ভেতরের জগত। স্বপ্নে এক অলৌকিক শক্তির দর্শন হয়, যিনি বলেছিলেন
জীবনের কষ্ট আর একাকীত্বে ভেঙে পড়ো না। তুমি বেছে নেওয়া মেয়ে, সমাজের সেবায় তোমার পথ তৈরি হয়েছে। নিজেকে দাও অন্যদের কল্যাণে।

এই ঈশ্বরীয় স্বপ্ন কেবল একটি অভিজ্ঞতা ছিল না, ছিল এক জীবনপরিবর্তনকারী মুহূর্ত। সেই মুহূর্ত থেকে তাঁর মধ্যে জেগে ওঠে এক আত্মিক শক্তি। তিনি উপলব্ধি করেন, দুঃখে ডুবে থাকা নয়, সমাজের দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার মধ্যেই আছে জীবনের সার্থকতা।

এই আত্মজাগরণের মুহূর্তে তিনি এক আশ্চর্য পরিচয়ের সাক্ষাৎ পানএক পরম দয়ালু ও আধ্যাত্মিক গুরু ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পরিচয় হয়। এই গুরু তাঁকে শুধু আশ্রয়ই দেননি, তাঁকে জীবনের দিশাও দেখান। গুরু বলেন
"সত্য সেবা করো, নিজের ত্যাগেই সমাজ পাল্টাবে। ঈশ্বর তাঁকেই বেছে নেন, যিনি নিজের বেদনা ভুলে অন্যকে ভালোবাসতে জানেন।

এই গুরুর কাছ থেকেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দীক্ষা গ্রহণ করেন। তাঁর মধ্যে জন্ম নেয় নতুন এক নামগুরু মা কমলি সরেন তিনি তখন বুঝতে পারেন, এই জীবন তাঁর নয় শুধুএই জীবন সমাজের, নিপীড়িতদের, প্রান্তিকদের।

দীক্ষা গ্রহণের পরেই তাঁর মধ্যে শুরু হয় এক অন্যরকম আগুনের জন্ম। তিনি আর নিঃসঙ্গ মা নন, তিনি এক নবীন পথপ্রদর্শক, সমাজের এক সংগ্রামী যোদ্ধা। ধর্ম ও কর্মকে একসাথে মিলিয়ে, তিনি তৈরির কাজ শুরু করেন এক নতুন ভবিষ্যৎ।

এই সময়েই তাঁর জীবনকে আরও দৃঢ় করে তোলেন একজন অনুপ্রেরণাদায়ক পুরুষতপন ঘোষ মহাশয় পরবর্তী অধ্যায়ে আমরা দেখব, কীভাবে তপনবাবুর সান্নিধ্য ও দিকনির্দেশনায় গুরু মা কমলি সরেন হয়ে উঠলেন এক সমাজনায়িকা।

 

                                                  

GURU MA AND TAPAN GHOSH


অধ্যায় ৪: তপন ঘোষের প্রভাব

গুরু মা কমলি সরেনের জীবনে এক নতুন পথের সূচনা হয় যখন তিনি পরিচিত হন এক মহান দেশপ্রেমিক, চিন্তাবিদ ও সমাজসেবী তপন ঘোষ মহাশয়ের সঙ্গে। তপনবাবু ছিলেন একজন অগ্রজের মতোযিনি কেবল দৃষ্টিভঙ্গি দেননি, জীবনের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।

তাঁর কথায়, “সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের পাশে না দাঁড়ালে ঈশ্বরকেও খুঁজে পাওয়া যায় না।

এই শিক্ষা কমলি সরেনের মনে গভীর ছাপ ফেলে। তিনি বুঝতে পারেন, সেবার মানে শুধু দান নয়, ত্যাগও। তপনবাবুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি নিজেই নিজেকে তৈরি করতে শুরু করেনএক নেত্রী হিসেবে, এক আশ্রয়দাত্রী হিসেবে। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর পথচলা বাস্তব সমস্যা মোকাবিলায় হাতে-কলমে কাজ করা।


অধ্যায় ৫: আশ্রমের সূচনা ও কাজ

নিজের চাষযোগ্য ছোট জমি থেকে শুরু হয় স্বপ্নের আশ্রম। নাম দেনবনবাসী কল্যাণ আশ্রমএই আশ্রম কেবল একটি গৃহ ছিল না, এটি হয়ে ওঠে উত্তরবঙ্গের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সাহসের প্রতীক।

এই আশ্রমে ঠাঁই পায় নিপীড়িত আদিবাসী মেয়েরা, নির্যাতনের শিকার শিশুরা এবং সমাজে উপেক্ষিত বহু হতদরিদ্র। আশ্রমে প্রতিদিন সকালে প্রার্থনা, সন্ধ্যায় সংস্কারমূলক শিক্ষা ও বিভিন্ন হস্তশিল্প শিক্ষার ব্যবস্থা চালু করেন তিনি।

তিনি বিশ্বাস করতেননারীর শিক্ষা, আত্মসম্মান ও আর্থিক স্বনির্ভরতা থাকলেই সমাজ পাল্টাবে।


 

অধ্যায় ৬: নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম

সাঁওতাল সমাজের বহু মেয়ে যখন নিপীড়নের শিকার হতোযৌন হেনস্তা, বাল্যবিবাহ, ঘরছাড়া হওয়াগুরু মা তখন সবার আগে ছুটে যেতেন সেই মেয়ের পাশে। কখনও থানায়, কখনও ব্লক অফিসে, কখনও গ্রামসভায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতেন।

তিনি বলতেন,
আমি তাদের মা, যতক্ষণ না তারা নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে, আমি তাঁদের ছেড়ে যাব না।

এক মেয়ের জন্য আদালতে গিয়ে লড়েছেন, আরেকজনকে মাদকাসক্তির জাল থেকে উদ্ধার করে তার পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর এই অদম্য লড়াই তাঁকে সমাজে মেয়েদের বটগাছহিসেবে পরিচিত করে তোলে।


 

অধ্যায় ৭: সংগঠন ও সামাজিক দায়িত্ব

বনবাসী কল্যাণ আশ্রম এখন শুধু একটি আশ্রম নয়, একটি আন্দোলন। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর কাজ ছড়িয়ে পড়ে। রাজবংশী, সাঁওতাল, মুন্ডা, ওঁরাঁও সমাজের লোকজন তাঁর কাজে উদ্বুদ্ধ হন।

তিনি সামাজিক ন্যায়বিচার, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। তাঁর কাজের গতি দেখে সংগঠনটি আরও বিস্তৃত হয়।


             


         

অধ্যায় ৮: পদ্মশ্রী পুরস্কার এক স্বীকৃতির গল্প

২৫শে জুন, ২০২১। ভারত সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা আসেকমলি সরেন-কে পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত করা হবে।

এই সংবাদে উত্তরবঙ্গের মানুষ থেকে শুরু করে গোটা রাজ্য জুড়ে আনন্দের ঢেউ ওঠে। যিনি ভিক্ষার থালা হাতে গ্রামে ঘুরে আশ্রম চালাতেন, তিনিই আজ দেশের অন্যতম সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান অর্জন করছেন।

তিনি বলেছিলেন
এই পুরস্কার আমার নয়, এই আশ্রমের প্রতিটি মেয়ে, প্রতিটি স্বেচ্ছাসেবক, আমার গুরু ও প্রয়াত তপনবাবুর স্মৃতির জন্য উৎসর্গ করছি।


                                

                      

অধ্যায় ৯: মন্দির ও ছাত্রাবাস গড়ার স্বপ্ন

পদ্মশ্রী পাওয়ার পর তাঁর স্বপ্ন আরও বিস্তৃত হয়। প্রবাসী বাঙালিদের সাহায্যে কিছুটা জমি সংগ্রহ করতে পেরেছেন তিনি। এই জমিতেই তিনি গড়ে তুলতে চান

  • একটি রাধাকৃষ্ণ মন্দির, যা হবে আধ্যাত্মিক চেতনার কেন্দ্র
  • একটি ছাত্রাবাস, যেখানে চারটি ঘর (১২x১৩ ফিট) হবে, যাতে মেয়েরা থেকে পড়াশোনা করতে পারে

এটি কেবল স্থাপনা নয়, একটি আত্মগঠনের জায়গা। যেখানে নারীরা শিখবে আত্মসম্মান, সংস্কার ও সাহস।


অধ্যায় ১০: আগামী দিনের গুরু মাতৈরি করার স্বপ্ন

গুরু মা চানতাঁর মতই আরও গুরু মাতৈরি হোক। যেন সমাজের প্রত্যেক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েরা নিজের ভিতরে শক্তি খুঁজে পায়, যেন প্রতিটি অপমানের বিরুদ্ধে একজন নারী দাঁড়াতে পারে।

তিনি বলেন
আমি চাই, আমার আশ্রম একদিন নারীনেত্রীদের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠুক।

এই ভাবনাই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।


অধ্যায় ১১: সমাজের প্রতি আহ্বান

আজ তিনি সমাজের প্রতিটি স্তরের কাছে আহ্বান জানাচ্ছেনএই ছাত্রাবাস ও মন্দির নির্মাণের কাজে এগিয়ে আসুন। সামান্য সহায়তাও এক বড় ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে।

তিনি বারবার বলেন
আমি টাকা চাই না, আমি সহানুভূতি চাই, সহযোগিতা চাই। যেন এই কাজ আমার মৃত্যুর পরেও চলতে পারে।


অধ্যায় ১২: শেষ কথা এক মহীয়সী নারীর জীবনপাঠ

কমলি সরেন আজ এক পরিচিত নাম। কিন্তু তাঁর পেছনে রয়েছে অগণিত না-জানা রাতের কষ্ট, অশ্রু, প্রার্থনা আর প্রতিবাদ। তিনি আমাদের শিখিয়েছেননারীর শক্তি কেবল ঘরের মধ্যে নয়, সমাজ পাল্টানোর হাতিয়ার হিসেবেও।


অধ্যায় ১৩: উপসংহার (পাঠকের উদ্দেশ্যে)

এই বই কেবল একটি জীবনের গল্প নয়, একটি আন্দোলনের দলিল।
পাঠকের কাছে আহ্বানএই আন্দোলনের আপনি-আমি সকলে অংশীদার হই।
আপনি যদি সাহায্য করতে চান, এই আশ্রমের পাশে দাঁড়াতে চান, তাহলে আপনার হৃদয়ই হবে সবচেয়ে বড় অনুদান।

                                     





0 Comments